আহমেদ হোসাইন ছানু, ঢাকা থেকে:
বাংলাদেশে বৈধ কিংবা অবৈধভাবে কর্মরত ভারতীয়দের সংখ্যা নিয়ে সম্প্রতি একটি বড় ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কিছুদিন আগে অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা বললেন, বাংলাদেশে ২২ লাখ ভারতীয় কর্মরত রয়েছে। যারা অবৈধভাবে পাচার করছে প্রায় ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার অধিক। অনতিবিলম্বে অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকদের ফেরত পাঠানো ও বিএসএফ কর্তৃক অবৈধ পুশ-ইন বন্ধের দাবিতে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ এর উদ্যোগে শুক্রবার সকাল ১০.০০ ঘটিকায় জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
লেঃ কর্ণেল (অবঃ) খন্দকার ফরিদুল আকবর এর সভাপতিত্বে এবং মোঃ মোস্তফা আল ইহযায এর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট খায়রুল আহসান, চেয়ারম্যান: ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ ও সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোট। এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, লেঃ কর্ণেল (অবঃ) হাসিনুর রহমান, মেজর (অবঃ) হারুন আর রশিদ, মেজর (অবঃ) মাসুউদুল হাছান, চেয়ারম্যান মুসলিম ওয়ার্ল্ড, জহিরুল ইসলাম চেয়ারম্যান আরজেএফ, আমিনুল ইসলাম বুলু, সভাপতি, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশন, এডভোকেট মোঃ রবিউল হোসেন রবি, সহসাধারণ সম্পাদক জাতীয়তাবাদী কৃষকদল, এডভোকেট জাকির সিরাজি সমন্বয়ক লিগ্যাল এইড সা.সু.প, ড. কাজী মনিরুজ্জামান সহ-সভাপতি জাতীয়তাবাদী তাঁতীদল, আব্দুল করিম আহবায়ক ন্যাশনাল কৃষক শ্রমিক পার্টি, মুজাম্মেল মিয়াজি চেয়ারম্যান বাংলাদেশ জনজোট পার্টি, আরিফ বিল্লাহ সাংগঠনিক সম্পাদক আমজনতার দল, মোঃ সেলিম রেজা বাচ্চু, প্রতিনিধি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, জালাল আহমেদ কোটা সংস্কার আন্দোলন, মো. সাহিদুল ইসলাম, আব্দুল আলিম, আহমেদ হোসাইন ছানু, লুবনা আক্তার প্রমুখ।
এসময় বক্তাগণ বলেন গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী কথিত ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ ধরতে অভিযান শুরু করে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ‘অবৈধ অভিবাসী’ সন্দেহে বিভিন্ন রাজ্যে গ্রেপ্তার হওয়া মুসলমান এবং বাংলা ভাষাভাষীদের উড়োজাহাজে করে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় আনা হয়। এরপর তাদের তুলে দেওয়া হয় বিএসএফের হাতে। আর বিএসএফ সময় ও সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে তাদের। ৭ মে প্রথম দফায় খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা ও পানছড়িতে ৬৬ ও কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে আরও ৩৬ জনকে দিয়ে শুরু হওয়া ‘পুশইন’ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
শুধুমাত্র মে মাসেই ১২২২ জনকে ঠেলে দিয়েছে ভারত। বিজিবির সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ২৪ দিনে মোট ১ হাজার ২২২ জনকেী বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছে ভারত। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে ১৩২ জন, সিলেট সীমান্ত দিয়ে ১১৫ জন, মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে ৩৮০ জন, হবিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ৪১ জন, সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ১৬ জন, কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন, ফেনী সীমান্ত দিয়ে ৫২ জন, কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ৯৩ জন, লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে ৮৫ জন, ঠাকুরগাঁও সীমান্ত দিয়ে ১৯ জন, পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ৩২ জন, দিনাজপুর সীমান্ত দিয়ে ১৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ১৭ জন, কুষ্টিয়া সীমান্ত দিয়ে ৯ জন, মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ৩০ জন, চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ১৯ জন, ঝিনাইদহ সীমান্ত দিয়ে ৫২ জন এবং সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ২৩ জন এবং সুন্দরবনের গহীন অরণ্যের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় ৭৮ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে। জুন মাসে প্রায় ১৩ শত জনের অধিক ব্যক্তিকে পুশ-ইন করা হয়েছে যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
আসামের মুখ্যমন্তী বলে ছিলো, বিদেশি শনাক্ত হলেই ‘পুশ ইন’ করা হবে বাংলাদেশে। তারই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত নিরাপত্তা আইন এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে পুশ-ইন করা হচ্ছে। ভারতীয় নাগরিক এবং রোহিঙ্গাদেরও পুশ-ইন করা হচ্ছে বাংলাদেশে।
সীমান্তে যারা ধরা পড়ছে তাদের গণনা করা হচ্ছে কিন্তু যারা ধরা পড়ছে না তাদের তথ্য সংগ্রহের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এখনো দেখা যায় নি! রাতের আঁধারে লুকিয়ে সীমন্ত পাড়ি দিচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। দেশব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে তারা, তাদেরকে খুঁজে বের করতে জরুরি ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়ে আরও বলেন, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ২১ মে ঠেলে পাঠানো ১১ নারী-শিশুকে আটক হয়। আটকৃতদের বরাত দিয়ে স্থানীয়রা বলছিলো, শুধুমাত্র ১১ জন নয়, সেদিন দুই দফায় অন্তত ৫০ জনকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করা হয়েছে। বাকিরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। এই হিসাব অনুযায়ী ধারণা করা যায়, ইতিমধ্যে ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ দেশের অভ্যন্তরে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে।
১৮ জুন দিল্লির রোহিণী এলাকার ভাড়া বাড়ি থেকে ৩ জন কে আটক করে বাংলাদেশ পুশ-ইন করা হয়। ঐসব ব্যক্তির পরিবার পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের বাসিন্দা, তাদের পরিবার বীরভূমের পাইকার পুলিশের কাছে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন এতে সনাক্ত হয় বাংলাভাষী ভারতীয় নাগরিকদেরও বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় নাগরিকদের পুশ-ইন করা হচ্ছে জানিয়ে আদালতে যাওয়ার হুমকি দেয় কেন্দ্রীয় সরকার কে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলেও বাংলাদেশ সরকার কেন পারছে না অনতিবিলম্বে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কে জবাব দেওয়ার আহবান জানান।
“ভারত থেকে ‘পুশ ইন’ হচ্ছে, সেটি বাস্তবিক অর্থে ঠেকানো সম্ভব নয়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের দেওয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেন, ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে লালমনিরহাট সীমান্তে দুইশোর বেশি মানুষকে বাংলাদেশে পুশ ইন করার চেষ্টা করেছিল ভারত। কিন্তু বিএনপি সরকারের অনমনীয় অবস্থান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান এর বিচক্ষণতার কারনে সীমান্তের শূন্যরেখায় প্রায় দুই মাস রেখে ঐসকল লোকদের ফেরত নিতে বাঁধ্য হয়ে ছিলো দিল্লি। আপনারা ২০০৩ সাল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন এবং নতজানু রাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে আসুন। এটা নিয়ে ভারতের সঙ্গে চিঠি আদান প্রদান বন্ধ করে পুশ-ইন হওয়া প্রতিটি ব্যক্তিকে পুশ-ব্যাক করুন। একইসাথে বাংলাদেশ অবস্থানরত অবৈধ ভারতীয়দের অনতিবিলম্বে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।
ভারতবিরোধী বড় বড় কথা বলে সস্তা বাহবা পাওয়া যেতে পারে। অথচ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতের জন্য বরাদ্দকৃত ভূমি বাতিল করা হয়নি, তিস্তা প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না, ভেঙ্গে পড়েছে সীমান্ত নিরাপত্তা, অবাধ বিচরণ করছে অবৈধ ভারতীয় নাগরিক এবং ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মতো নতজানু পররাষ্ট্রনীতিও লক্ষ্যনীয়। এদেশের জনগণ আর কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতি দেখত চায়না, জ্বলন্ত জুলাইয়ের পর আসছে রক্তবৃষ্টির আগস্ট। দেশের মানুষ এখন স্বনির্ভর, জবাবদিহিতা ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির সম্পূর্ণ নতুন বাংলাদেশ চায়
ইকবাল হোসাইন কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত
𝐄𝐦𝐚𝐢𝐥: 𝐬𝐡𝐮𝐯𝐨𝐣𝐚𝐭𝐫𝐚𝟐𝟎𝟐𝟓@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত